সোনার ফসল

                                                             

সোনার ফসল

কাহিনী চিত্রনাট্য : বিভাস ভুঁইয়া



'সোনার ফসল' আমাদের ইউটিউব চ্যানেলের প্রথম গল্প। এই গল্পে হিরো একজন অলস ব্যক্তি। তার অলসতার জন্য নিজের সংসার ডুবে যেতে বসেছিল। কিন্তু তার স্ত্রীর বুদ্ধির জন্য সেই ব্যক্তি তার ভুল বুঝতে পারে।  এই গল্পের পুরো স্ক্রিপ্ট টা নিচে দেওয়া হলো এবং শেষে এই গল্পটির ইউটিউব লিংক দেওয়া হলো। ..

দৃশ্য

.........

[বুড়ো চাষী, বৈশাখ মাসের দুপুরে হাতে কোদাল নিয়ে গামছায় ঘাম মুছতে মুছতে আসছে...]

 

বুড়ো চাষি : উফ! কি গরম পড়েছে শরীর আর বইছে না এই বুড়ো বয়সে আর কত টানবো? (রেগে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে) আর আমার এই কপালে এক ছেলে জুটেছে বটে সারা দিন খায় আর ঘুমায় (রাস্তা দিয়ে চলে যায়)

 

 

দৃশ্য

.........

[বুড়ো চাষির বাড়ি বুড়ো দালনে বসে চিত্কার করে...]

 

বুড়ো চাষি : বৌমা! বৌমা! শুনছো? খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও

বৌমা : (ঘর থেকে) হ্যাঁ বাবা, যাই 

(বৌমা, জল ভাতের থালা নিয়ে এসে বাবা কে খেতে দেয়)

বুড়ো চাষি : (খেতে খেতে) বৌমা, খোকা কই? (একটু রেগে) কোথায় সেই কুঁড়েটা?

বৌমা : (পাখা দিয়ে চাষীকে হাওয়া করতে করতে, একটু বিরক্ত স্বরে) তেনার তো ওঠার কোন নাম-গন্ধই নেই সেই কখন থেকে ডাকছি

বুড়ো চাষি : (খেতে খেতে) কপাল করে একটা ছেলে পেয়েছি বটে  বুঝলে বৌমা? (বৌমার দিকে তাকিয়ে) আমি সকাল থেকে খেটে খেটে  মরছি আর তিনি লাট সাহেবের মত ঘুমিয়ে যাচ্ছে সংসারের কোনো কুটিটাও নারে না

(সেই সময় ছেলে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে)

ছেলে : কিগো শুনছো? আমার বড্ড খিদে পেয়েছে খেতে দাও

চাষী : (রাগান্বিত স্বরে) হতচ্ছাড়া! এই ওঠার সময় হলো তোর? তোর কোনো কাজ নেই? এরকম করে আর কত দিন চলবে ?

ছেলে : (বিরক্ত হয়ে) ধ্যাত! তোমার সেই এক কোথা ঘুম থেকে উঠতে না উঠতে সেই শুরু করে দিলে

বৌমা : (খাবার নিয়ে এসে, থালাটা মাটি রেখে বলে...) খাবার দিয়ে দিয়েছি, খেয়ে নাও

চাষি : কোনদিন তো কোনো কাজ করতে দেখলাম না সারাদিন খাওয়া আর ঘুম (বিরক্ত হয়ে) হে ভগবান! আমার মরণ হয় না কেন? তুলে নাও আমায় আমি আর পারছি না এই অচল ছেলেকে একটু চালিয়ে দাও হে ভগবান এই ছেলেটাকে একটু সুবুদ্ধি দাও

 

(এই ভাবে কিছুদিন চলে গেল)

 

 

সিন

.........

[চাষীর বাড়ি সকাল চাষি অসুস্থ পাশে ছেলে বৌমা বসে আছে]

চাষি : (ভাঙা ভাঙা গলায়) খো.. খো.. খোকা..

ছেলে : হ্যাঁ বাবা

চাষি : তোকে একটা কোথা বলার ছিল!

ছেলে : হ্যাঁ বাবা, বলো

চাষী : (থেমে থেমে বলবে) আমাদের চাষের... চাষের জমির নিচে  গুপ্তধন... গুপ্তধন আছে আর...

(একথা বলতে বলতেই তিনি মারা যান সবাই কান্নাকাটি শুরু করে)

 

 

দৃশ্য

........

[কয়েকদিন পর চাষির বাড়ি সকালবেলা]

বৌমা : কিগো শুনছো? যাওনা জমিতে একবার, একটু গিয়ে দ্যাখো না

ছেলে : (একটু রেগে) ওহ হো! সেই একই কথা শুনে শুনে আমার কান ব্যথা হয়ে গেল দয়া করে এই কথা আমায় আর বলবে না কখনো

বৌমা : আরে বাবা, তুমি একটু গিয়েই দ্যাখো না! যদি কথাটা সত্যি হয়, তাহলে তো আমাদের ভাগ্য ফিরে যাবে!

ছেলে : আমি এসব বিশ্বাস করি না ওসব গুপ্তধন-টুপ্তধন 'লে কিছু নেই আমাদের জমিতে

বৌমা : না গেলে কি করে জানবে? তুমি কি জ্যোতিষী মনে করো নিজেকে? ঘরে বসেই সব জেনে যাবে

ছেলে : (বিরক্ত হয়ে) ধুত্তেরি! তোমাদের জ্বালায় একটু শান্তিতে ঘুমোতেও পারব না দেখছি!

(এই বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে)

 

(এইভাবে আরও কয়েকদিন কেটে গেল)

 

বৌমা : কি গো, একটু জমির দিকে যাও না!

ছেলে : (বিছানায় শুয়ে) ধুর! আজ ভালো লাগছে না, আমার মাথায় খুব ব্যথা অন্যদিন একদিন যাব

 

(পরের দিন সকালে চাষির ছেলে বিছানায় শুয়ে আছে পাশে দাড়িয়ে ছেলের বউ ডাকছে...)

 

বৌমা : কি গো উঠ না! একবার যাও না জমিতে একবার গিয়েই দ্যাখো না  কি গো?

ছেলে : (ঘুমের ঘোরে) আমি ওসব বিশ্বাস করি না তাছাড়া আজ আমার পেটে খুব ব্যথা আমি অন্য একদিন গিয়ে দেখে আসব

 

(এইভাবে দিনের পর দিন কিছু-না-কিছু বাহানা দিয়ে কাটিয়ে দিত)

 

 

দৃশ্য

.........

[চাষির বাড়ি রাত্রি ছেলে শুয়ে শুয়ে ভাবছে...]

 

ছেলে : আচ্ছা, ওই জমিতে সত্যিই যদি গুপ্তধন থাকে তাহলে? (একটু ভেবে) না না না এরকম কি করে হবে? বাবার কাছে এত টাকা এলোই বা কীভাবে? যদি না থাকে বাবা বলবেই বা কেন? (একটু ভেবে) যদি থাকে? নাহ, কাল সকালে গিয়ে একবার দেখতে হবে!

 

 

দৃশ্য

.........

[পরের দিন সকাল]

 

ছেলে : (কাঁধে কোদাল গামছা নিয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে বউকে বলল...) আমি জমিতে যাচ্ছি তুমি এত করে বলছ যখন, যায় গিয়ে দেখে আসি একবার

('লে বেরিয়ে গেল)

 

 

দৃশ্য

.........

[সকাল চাষের ক্ষেত]

 

ছেলে : (খানিক চিন্তা 'রে মনে মনে ভাবে) কোথায় আছে সেই গুপ্তধন? হ্যাঁ, গাছের দিকটাই হতে পারে!

(তারপর সে তার কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে খুজতে থাকে গাছের দিকে না পেয়ে অন্যদিকে খোঁজে সেদিকেও পেল না)

ছেলে : তাহলে কি আমি গুপ্তধন পাব না? নাহ, আজ যখন এসেছি তখন পুরো জমি খুঁজেই তবে যাব

(এই 'লে সে পুরো জমিতে মাটি খুঁড়ে গুপ্তধন খুঁজতে শুরু করল সকাল থেকে বিকাল হয়ে গেল পুরো জমি মাটি খুঁড়ে খোঁজা হয়ে গেল, কিন্তু সে কিছুই পেল না ভীষণ রেগে গিয়ে বলল...)

ছেলে : আমি জানতাম, এরকম কোন গুপ্তধন নেই

 

 

দৃশ্য

.........

[চাষীর বাড়ি বউ রান্না করছে ছেলে বাড়িতে এসেই কোদালটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গজগজ করতে থাকে তার শব্দ শুনে বউ বেরিয়ে আসে]

 

বৌমা : (আনন্দে) কি গো তুমি কখন এলে? কিছু পেলে জমিতে?

ছেলে : (একটু রেগে) ঘোড়ার ডিম পেয়েছি বাবা বলেছে কোথায় রেখে গেছে?

বৌমা : হ্যাঁ বাবা বললেন তো, জমিতে আছে তুমিও তো ছিলে তখন

ছেলে : (রাগান্বিত স্বরে) আমি জানতাম আমি জানতাম ওসব কিছুই নেই পুরো জমি খুঁড়ে ফেলেছি, তাও কিচ্ছু পাইনি

(এই বলে ঘরে ঢুকে গেল)

বৌমা : (অবাক হয়ে, মনে মনে ভাবে) পুরো জমি খোঁজা হয়ে গেছে? এই অলস লোকটা পুরো জমি খুঁড়ে ফেলেছে? নাহ, আমাকে গিয়ে একবার দেখতে হবে

 

 

দৃশ্য

.........

[পরের দিন সকাল]

(বৌমা চাষের জমির কাছে যায় এদিক ওদিক তাকায় দ্যাখে পুরো জমিটাই কোপানো হয়ে গেছে একটু মুখ ভার হয়ে যায় তার মনে মনে বলে...)

বৌমা : সত্যিই কিছু পাওয়া যায়নি! এবার আমাদের দিন চলবে কি করে? বাবা তো চাষ করেই সংসার চালাতো আর এই কুড়েটা তো জমিতেই আসতে চায় না

(খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে হঠাৎ একটা বুদ্ধি আসে তার মাথায় কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বলে...)

বৌমা : হ্যাঁ এতেই কাজ হবে 

 

 

দৃশ্য ১০

..........

[চাষীর বাড়ি ভোরবেলা চাষীর বৌমা ছেলে দুজনে শুয়ে আছে]

 

বৌমা : শুনছো? কি গো শুনতে পাচ্ছ?

ছেলে : হু, বলো

বৌমা : কাল রাতে বাবা স্বপ্নে এসেছিলেন তোমার কাজ দেখে খুব খুশি হয়েছেন

ছেলে : (রেগে) কি বলল তোমায়?

বৌমা : বাবা কিছু বলার আগেই আমি বাবাকে গুপ্তধনের কথা  জিজ্ঞাসা  করলাম বললাম বাবা গুপ্তধন তো জমিতে নেই

ছেলে : তারপর কি বলল?

বৌমা : বাবা বললেন...

চাষীর ভয়েস : কে বলল নেই? আমি তো পুরো কথা শেষ করে যেতে পারিনি? তাই তো বলতে এলাম আমার জমিতে গুপ্তধন আছে আমি ভগবানে আদেশ পেয়েছিলাম এই বার আমরা যত যত্ন নিয়ে ধান চাষ করব, ধানের বদলে তত বেশি সোনা ফলবে আমি তো আর এই বার চাষ করতে পারলাম না তুমি খোকাকে বলো বৌমা এবার মন দিয়ে চাষ করতে ভগবানের আদেশ মিথ্যা হয় না

ছেলে : আমি যাব না আমি চাষ করব না আমার ওসব ভালো লাগে না একবার তোমার কথা শুনেছি আর শুনবো না

বৌমা : আচ্ছা এটাই শেষ বার তুমি তো চাষের শক্ত কাজটাই করে ফেলেছ সামনেই বর্ষা ধান রুয়ে দিয়ে পরিচর্চা করলেই হবে আমিও তোমার সাথে কাজ করব দেখিই না কি হয়!

ছেলে : আচ্ছা ঠিক আছে

 

(এরপর চাষির ছেলে বৌ দু'জনে একসাথে খুব যত্ন নিয়ে চাষ করে এবং তার পরিচর্চা করে বর্ষাকাল চলে যায় আস্তে আস্তে সোনালী ফসলে ক্ষেত ভরে ওঠে)

 

 

দৃশ্য ১১

..........

[চাষীর জমি চাষির ছেলে মা দাঁড়িয়ে আছে]

 

ছেলে : (দুঃখে) কই গো? সোনা তো হল না ধানই তো হল

বৌমা : কে বলল হয়নি? তো, দেখতে পাচ্ছ না? সোনালী ফসল নায়েব মশাইয়ের সাথে আমার কথা হয়ে গেছে উনি জমির ধান দেখেও গেছেন ওনার খুব পছন্দ হয়েছে আমাদের সারাবছর খাওয়া আগামী বছরের চাষের জন্য ১০ মণ ধান রেখে বাকিটা বেচে দেব বলেছি উনি রাজি আছেন আমাদের ধানের দাম ১০০ টাকা দেবে বলেছেন আর অগ্রিম হিসাবে ৫০ টাকা দিয়েছেন (আঁচল থেকে টাকাটা বের করে) এই দ্যাখো ৫০ টাকা

ছেলে : কি বলছো তুমি? (অবাক হয়ে) একশো টাকা দেবে বলেছেন! একশো টাকা?  এতে তো আমাদের পুরো বছর হাসতে হাসতে কেটে যাবে গো কোনো অভাব হবে না আমাদের আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না!

বৌমা : দেখেছ তো? বাবা কেন বলেছিলেন? জমিতে গুপ্তধন আছে

ছেলে : (আনন্দে) বুঝেছি গো বুঝেছি আরে এও বুঝতে পেরেছি  তোমার স্বপ্নে বাবা কেন এসেছিলেন! তুমি আমাকে দিয়ে চাষ করানোর জন্য এই সব মিথ্যে বলেছিলে তোমাকে আর মিথ্যে বলতে হবে না আমি এবার থেকে নিজেই চাষ করব (উপর দিকে তাকিয়ে) ধন্যবাদ বাবা আর আমার কুরেমির জন্য আমায় ক্ষমা করে দিও (বউয়ের দিকে তাকিয়ে) তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ আমাকে শোধরানোর জন্য

 

আর আপনাকে বলছি হ্যাঁ আপনাকে কেমন লাগলো আমাদের এই গল্পটা? কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন ধন্যবাদ

 


 

সমাপ্ত

 

 

No comments:

Post a Comment

Pages